গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীপূর্ব থানাধীন উত্তর আরিচপুর এলাকায় শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী রাবেয়া সাবরিন লিখনকে (৩৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অনলাইনে জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করতে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিবন্ধী রাবেয়াকে হত্যা করেছেন।
নিহত রাবেয়া সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন শরীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রীশিল্পে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন। সোমবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃত ওই দম্পতি হলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে উজ্জল (২৮) ও তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (১৯)। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার নিন্দারাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তবে টঙ্গীর গাজীবাড়ি পুকুরপাড় এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা।
পিবিআই জানিয়েছে, পুকুরপাড় এলাকার গোলাম মোস্তফার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন রাবেয়া। গত ১৯ মে সকালে তিনি বাসায় একাই ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে এক প্রতিবেশী কক্ষটির দরজা বাইরে থেকে আটকানো দেখতে পান। পরে দরজা খুলে দেখেন বিছানার ওপর ওড়না ও গামছা দিয়ে রাবেয়ার হাত, পা ও মুখ বাঁধা লাশ পড়ে আছে। এরপর পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। ওই ঘটনায় রাবেয়ার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে গাজীপুরের পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। হত্যার দায়ের একই বাসার পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি জানান, সাইফুল একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত।
তার দুই মাসের বাড়িভাড়া বাকি থাকায় স্ত্রী সাদিয়া আক্তারের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়াবিবাদ হতো। পাশের ফ্ল্যাটের রাবেয়ার বোনাস পাওয়ার খবর জানতে পেরে ওই টাকা চুরির পরিকল্পনা করেন তারা। ১৯ মে সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে রাবেয়া রান্নার জন্য ফ্ল্যাটের বাইরে গেলে তারা ভেতরে ঢুকেন তারা। একপর্যায়ে রাবেয়া ফ্ল্যাটের ফিরে এলে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ব্যাগ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ২ কেজি চাল নিয়ে পালিয়ে যান তারা। এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাবেয়া সাবরিন লিখন একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। এ ধরনের মানুষকে সমাজের বোঝা মনে না করে আমাদের সকলেরই উচিত তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আসামিরা সামান্য কিছু টাকার জন্য যে গর্হিত অপরাধ করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।’