নাসিক নির্বাচন – শহরজুড়ে তোলপাড় .. খোকন সাহার ৫লাখ টাকা দাবী,কখনো মোয়াক্কেল ছিলাম না,, নান্নু..ক্ষোভ প্রকাশ মেয়রপ্রার্থী আইভীর
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহার টাকা চাওয়া খবরে শহরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি ৩ মিনিট ১ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। অডিওতে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাইতে শোনা যায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে। খোকন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব।
শামীম ওসমানও আইভীর—এ কথাও বলতে শোনা যায় খোকন সাহাকে। তিনি আইভীর পক্ষে কাজ করছেন জানিয়ে নান্নুর কাছে টাকা চান। এর দুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিওটি ফাঁস হয়।
এদিকে অডিও ফাঁস হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। মেয়রপ্রার্থী আইভীও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিব্রত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ফাঁস হওয়া অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন সাহা বলেন, ‘নান্নু আমার মক্কেল। আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সে হয়তো অস্বীকার করে। তার পক্ষে-বিপক্ষে মামলা আমি করি। আমি তার কাছে প্রচুর টাকা পাবো। নির্বাচন উপলক্ষে আমার টাকার দরকার ছিল তাই আমি বলেছি। তাও ঘটনা ১০-১২ দিন আগের।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে আমার মক্কেল ও ছোট ভাই। আমি তার কাছে চাইতেই পারি টাকা। মামলার ডকুমেন্ট আছে আমার কাছে। এই ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা অনৈতিক মনে করি। এই কাজ করে আমাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।’
খোকন সাহার এই দাবি অস্বীকার করেন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। তিনি বলেন, ‘উনার কাছে কখনই মক্কেল ছিলাম না আমি। উনি নির্বাচন করবে তাই চেয়েছে। উনার সাথে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। ছোট ভাই বড় ভাই এমন কোনো যোগাযোগও নেই। উনি অনৈতিকভাবেই টাকা চেয়েছেন আমার কাছে।’
ফোনালাপের বিষয়ে মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমি কোনোদিন কারও কাছে টাকা চাইনি। আর তিনি আমার হয়ে টাকা চাইবে এটা বরদাশত করবো না। তাকে এমন কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যে টাকা চাইতে হবে। এ কাজ করে তিনি আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। দল নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
অডিও রেকর্ডে যা ছিল-
এক প্রান্তে: ‘হ্যালো’
অপর প্রান্তে: নান্নু? নান্নু?
নান্নু: হ্যাঁ।
অপর প্রান্তে: খোকন সাহা বলছি।
নান্নু: হ্যাঁ, আসসালামু আলাইকুম। দাদা কেমন আছেন?
খোকন সাহা: কই, কী করতেছো?
নান্নু: এই তো দাদা আছি।
খোকন সাহা : শোনো।
নান্নু: বলেন।
খোকন সাহা: আমিতো আইভীর পক্ষে।
নান্নু: হ্যাঁ।
খোকন সাহা: তুমি জানো শামীম ওসমানও আইভীর।
নান্নু: হ হ।
খোকন সাহা: আইভীরে … দিতেছে। বুঝো না?
নান্নু: হুম, দাদা।
খোকন সাহা: সবকিছু ঠিক আছে। আমার একটু টাকা-পয়সা লাগবো। তোমায় কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলে দেই। তোমার পক্ষে কেউ নাই। তোমার নামের ওপর অনেকেই অনেক কথা কয়। আমি তো দলের কাজ করতেছি। আইভীকে পাস করানোর জন্য কাজ করতেছি। বুঝছো?
নান্নু: অনেকবার হুম হুম করে জি দাদা।
খোকন সাহা: নান্নু, আমার তো টাকা লাগবো। টাকা লাগবো।
নান্নু: আপনের লাগবো, ইয়া করবো। অসুবিধা নাই।
খোকন সাহা: কালকে তুমি পুরান কোর্টে আমার চেম্বারে আমার কার্যালয়ে আসবা, কেমন?
নান্নু: আমিতো…
খোকন সাহা: আইভী তো আমার মাইয়া, জানাতো।
নান্নু: হ হ হ।
খোকন সাহা: কালকে পাঁচ লাখ টাকা পাঠায় দিবা।
নান্নু: আমিতো বৈদ্যেরবাজার নির্বাচনে আছি। আমাদের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না পরশুদিন।
খোকন সাহা: আরে দূর, পরশুদিন বাদ দাও।
নান্নু: আমাদের সোনারগাঁয়ে…
খোকন সাহা: আইভী পাস করলে…পরশুদিন তোমার নির্বাচন আছে সব কিছু কাজ করমু।
নান্নু: হু হু।
খোকন সাহা: কালকে পাঁচ লাখ টাকা বিকাল ৪টার সময় আমার চেম্বারে পাঠায় দিবা। পুরান কোর্টে। ঠিক আছে?
নান্নু: আমি কেরে? আমি কি আইভীর কিছু নাকি? আমি কিয়ের লাইগা টাকা পাঠাইতাম। আমি কিয়েলাইগা করতাম দাদা? আমিতো আইভীর কিছুতে নাই। আমিতো সিটি করপোরেশনের কাজও করি না। বুঝেন না?
খোকন সাহা: তোমার সোনারগাঁয়ের কাজ আমি করে দিমু।
নান্নু: আইচ্ছা, দাদা। কথা কমুনে।
খোকান সাহা: টাকা যদি পাঠাও কালকে, পাঁচ লাখ। কাজ করে দিমু তোমার। তুমি যেটা চাও করে দিমু। না পারলে উল্টো হয়ে যাইবো গা।
নান্নু: আইচ্ছা, ঠিক আছে। কইরেন।
খোকন সাহা: কালকে ৫টার সময় আমার চেম্বারে পুরান কোর্টে পাঁচ লাখ টাকা পাঠায় দিবা। তুমি দিবা না দিবা তোমার ব্যাপার। আমি তোমারে বললাম। তোমারে অনেক পছন্দ করি। অনেক ভালোবাসি। ঠিক আছে?
নান্নু: আইচ্ছা দাদা। ঠিক আছে।
খোকন সাহা: টাকা যদি পাঠাও তাইলে আমি তোমার সোনারগাঁয়ের কাজ করে দিমু।
নান্নু: আইচ্ছা দাদা।
খোকন সাহা: ক্লিয়ার কাট। তোমার যে ইচ্ছা ওইটা কইরা দিমু। আমার চেম্বারে তুমি পাঁচ লাখ টাকা পাঠায় দিবা কালকা। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা।
নান্নু: আইচ্ছা দাদা।
খোকন সাহা: ওকে।