নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যৌতুকের দাবিতে আসমা আক্তার (২৪) নামে দুই সন্তানের জননীকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আমজাদ হোসেন (৩০) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৯ জুলাই) পুলিশ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত আসমা উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকার ফালু মিয়ার কন্যা এবং তার স্বামী মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী এলাকার মৃত কবির হোসেনের ছেলে।
নিহতের বড় বোন উম্মে হাবিবা অভিযোগ করে জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে উপজেলার কল্যান্দী গ্রামে আমজাদের সাথে আসমার বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে আমজাদ মোটা অংকের টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য আসমাকে নির্যাতন করতেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দিতেন। বিগত ঈদুল আজহার পরও অসমাকে মারধরে আহত করে যৌতুকের জন্য তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিলে পিত্রালয় থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়। এর আগেও পিত্রালয় থেকে দেওয়া প্রায় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দিয়ে টাকা পয়সা নষ্ট করেন আমজাদ। কিন্তু তাতেও আমজাদ সন্তুষ্ট না হয়ে আসমার ওপর অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৮ জুলাই) রাতে আমজাদ এবং তার পরিবারের লোকজন আসমাকে একই কারণে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরে এক প্যাকেট বিষাক্তদ্রব্য (স্থানীয় ভাষায় কেড়ির বড়ি) এনে টেবিলের ওপর রেখে দেয়। কিন্তু বড়ির এটি ছিল অক্ষত। তার মানে নিহতের পরিবারের দাবি ওই পেকেট থেকে কোন বড়ি খোলা বা খাওয়া হয়নি।
নিহতের বাবা ফালু অভিযোগ করে বলেন, আমজাদের পরিবারের সদস্যরা লোক দেখানোর জন্য আসমাকে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এখানে তার চিকিৎসা করা সম্ভব বলে আসমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু আমজাদ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পপুলারে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফলে আমজাদ তড়িঘড়ি করে আসমার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল থেকে বের করে বাড়িতে নিয়ে এসে মরদেহ বাড়িতে রেখে সপরিবারে পালিয়ে যায়।
নিহতের বোন আবুতালেব মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা উম্মে হাবিবা আরও জানান, আমার বোনের ঠোঁটে কাটা দাগসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে এবং তার পরনের জামা কাপড় ছিড়া রয়েছে। তার দাবি তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ঘটনাটি আত্মহত্যা। তবে সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। বর্তমানে একটি আত্যাহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিপোর্টে হত্যা এলে পরবর্তীতে হত্যা মামলা রুজু হবে।