নগর সংবাদ।।আশিকুর রহমান, কলমাকান্দা – নেত্রকোনা। ইসলামের স্মরণীয় ঘটনা লেখকঃ অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী মুনাফিকের তালিকা -(১) বিখ্যাত সাহাবী হযরত হুজাইফা (রা.)কে রহস্য পুরুষ হিসেবে সকলে জানতো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু তাঁর কাছেই মুনাফিকদের পরিচয় জানাতেন। কোন লোক ইন্তেকাল করলে সকলে লক্ষ্য করতেন তাঁর জানাজাতে হুজাইফা (রা.) উপস্থিত হলো কি না ? জানাজায় হুজাইফা (রা.) উপস্থিত হওয়া মানে, লোকটির নাম মুনাফিকের তালিকায় নেই।যদি তিনি কোন ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ না করেন তাহলে অনেকে বুঝে নিতেন লোকটির নাম মুনাফিকের তালিকায় আছে। আমিরুল মোমেনিন খলিফাতুল মোসলেমি হযরত ওমর (রা.) হযরত হুজাইফা (রা.)’র নিকট জানতে চাইতেন তাঁর মুনাফিকদের নামের তালিকাটিতে ওমর (রা.)’র নাম আছে কি না। হুজাইফা (রা.) বললেন, হজরত ওমর (রা.) নিজ কানে শুনেছে নবীজী বলেছেন ওমর বেহেশতে যাবে। ||হযরত আব্বাস (রা.)’র পরনালা|
|-(২) হযরত আব্বাস (রা.) ছিলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় চাচা। তাঁর ঘর ছিল মসজিদে নববীর সাথে লাগানো। তাঁর ঘরের একটি পরনালার মাথা মসজিদের প্রাঙ্গণে পড়ে। পরনালার যে অংশ মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে পড়েছে সে অংশটি হযরত ওমর (রা.) ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। হযরত আব্বাস (রা.) ওমর (রা.)’র দরবারে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলে এটা আপনি কী করলেন ? হযরত ওমর (রা.) বললেন, মসজিদে নববীর অংশে লাগানো পরনালার অংশটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি।কারণ মসজিদে জায়গায় পরনালা লাগানো জায়েজ নেই। হযরত আব্বাস (রা.) বললেন, এ পরনালা আমি মহানবী (দ.) এর অনুমতি নিয়ে লাগিয়েছি। একথা শুনে হযরত ওমর (রা.) বললেন, আপনি আমার সাথে চলুন। দু’জন মসজিদে নববীতে পৌঁছলেন। হযরত ওমর (রা.) রুকুর মত করে ঝুঁকে আব্বাস (রা.)কে বললেন, হে আব্বাস! আমার কোমরের উপর দাঁড়িয়ে এ পরনালা লাগিয়ে নিন। খাত্তবের পুত্রের সাহস নেই মহানবী (দ.) এর অনুমতিতে লাগানো পরনালা ভেঙ্গে ফেলার। হযরত আব্বাস (রা.) বললেন, থাক পরনালাটি আমি লাগিয়ে নেব। ||আবু হানিফা (রা.)’র এশার ওজু দ্বারা ফজরের নামাজের কারণ|
|-(৩) একদিন ঈমামে আজম আবু হানিফা (রাহ.) চলার পথে এক বৃদ্ধ মানুষের মুখে শুনতে পেলেন, ‘ঈমাম আবু হালিফা (রাহ.) এমন এক আবেদ যিনি এশার ওযু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেন’। একথা শুনার পর ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) মনে মনে ভাবলেন, আমি তো এশা ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ আদায় করি না। যে প্রশংসা আমার করা হচ্ছে তা আমার মধ্যে নেই। তখনই তিনি অঙ্গীকার করলেন আজ হতে জীবনভর এশার ওজু দিয়ে ফজর নামাজ পড়বেন। সেদিন হতে তিনি সারারাত ইবাদত করতেন এবং এশা ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ আদায় করতেন। ||বাদশাহ হারুনুর রশীদের রাজত্বের মূল্য একগ্লাস পানি|
|-(৪) একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ একগ্লাস পানি পান করতে চাইলেন। পাশে বসে ছিলেন পাগল প্রকৃতির এক সাধক বাহলুল মজনু। বাদশাহ’র কাছে বাহলুল জানতে চাইলেন, আপনি কোন মরুভূমিতে আছেন তখন প্রচন্ড আপনার পানির পিপাসা। কিন্তু কোথাও পানি নেই। তখন একগ্লাস পানি কতটুকু সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করবে ? বাদশাহ বললেন, নিজের জীবন রক্ষার জন্য আমার যত সম্পদ আছে তার বিনিময়ে আমি এক গ্লাস পানি ক্রয় করবো। বাহলুল বললেন, এখন আপনি আল্লাহর নাম নিয়ে পানি পান করুন। বাহলুল বাদশাহ’র কাছে আবারো প্রশ্ন করলেন, আপনি এখন যে একগ্লাস পানি পান করেছেন তা যদি শরীর হতে বের না হয়। প্রেস্রাব যদি বন্ধ থাকে তখন কত সম্পদের বিনিময়ে প্রেস্রাব বের করবে ? বাদশাহ বললেন, প্রেস্রাব বের করার জন্য কেউ আমার রাজত্বটা চায় তাও আমি দিয়ে দিব। বাহলুল বললেন, আমিরুল মোমেনিন। আপনার রাজত্বের মূল্য এক গ্লাস পানি। রাজত্ব নিয়ে অহংকার করো না। আল্লাহ পাক সবকিছু বিনামূল্যে দিয়েছেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। ||হযরত আলী (রা.)’র নামাজ, মুয়াবিয়া (রা.) খানা|
|-(৫) হযরত আলী (রা.) ও হযরত মুয়াবিয়া (রা.) মধ্যে মতবিরোধ ও যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কোন পক্ষ অবলম্বন না করে উভয়ের কাছে যেতেন। নামাজের সময় হযরত আলী (রা.)’র সৈন্যবাহিনীর সাথে নামাজ পড়তেন আর খেতেন মুয়াবিয়া (রা.) সৈন্যবাহিনীর সাথে। আবু হুরায়রার কাছে জানতে চাইলেন তার কারণ। তিনি বললেন, হযরত আলীর কাছে নামাজ ভালো, মুয়াবিয়ার নিকট খানা ভালো। ||রোম সম্রাটের প্রস্তাব মুয়াবিয়া (রা.)’র না|
|-(৬) সিফ্ফিনের যুদ্ধে হযরত আলী (রা.) ও হযরত মুয়াবিয়া (রা.)’র সৈন্যবাহিনী পরস্পর মুখোমুখি। এমনি সময় রোমের সম্রাটের পক্ষ হতে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) কাছে প্রস্তাব আসলো হযরত আলী (রা.)’র বিরুদ্ধে অনেক সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করার। এ প্রস্তাব সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, ‘হে খৃস্টান বাদশাহ! তুমি ভাবছো আমাদের মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে আমাদের মুসলমান ভাই হযরত আলী (রা.)’র উপর আক্রমণ করবে ? জেনে রেখো! হযরত আলী (রা.)’র বিরুদ্ধে সামান্যতম আঘাতও যদি কোন অমুসলিমের পক্ষ হতে আসে তাহলে আমার সৈন্যবাহিনীর পক্ষ হতে সর্বপ্রথম তাদের শিরচ্ছেদের তলোয়ার উত্তোলিত হবে। ||নীলনদের কাছে হযরত ওমর (রা.)’র পত্র||-
(৭) মিসরের ঐতিহাসিক নীলনদের পানি প্রতিবছর শুকিয়ে যেতো। প্রতিবছর একজন সুন্দরী নারীকে নীলনদে বিসর্জন দিলেই পানির স্রোত প্রবাহিত হতো। আমিরুল মোমেনিন হযরত ওমর (রা.)’র খিলাফত কালে মিসর মুসলমানদের দখরে আসে। মিসরের গভর্নর নিযুক্ত হলো আমর ইবনুল আস। গভর্নর খলিফা হযরত ওমর (রা.)কে জানালেন, এখানে পানির প্রবাহের জন্য নিষ্পাপ নরবলি হচ্ছে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। হযরত ওমর (রা.) বিষয়টি অভিহিত হয়ে নদীর নিকট পত্র লেখেন। পত্রে খলিফা লিখলেন, ‘হে নদী! তুমি যদি আল্লাহর নির্দেশে প্রবাহিত হও, তাহলে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করছি, তুমি যেন প্রবাহিত হও। যদি প্রবাহিত হওয়া এবং শুকিয়ে যাওয়া আমার ইচ্ছায় হয় তাহলে তোমার কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। এই পত্রটি হযরত ওমর (রা.)কুমারীর পরিবর্তে নীলনদের শুকনো বালির ওপর নিক্ষেপ করতে নির্দেশ দিলেন। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে খলিফার চিঠিখানা নীলনদে রাখলেন, সাথে সাথে নীলনদের পানি প্রবাহিত হতে শুরু করলো। এ বছর আগের তুলনায় বেশি পানি প্রবাহিত হলো।