নগর সংবাদ।।বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিন এর পরিমান অনেক বেশী থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে এই আইস। সাম্প্রতিক সময়ে আইসের মাধ্যমে নেশার প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় র্যাব এই মাদক কারবারীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ০৫ কেজি আইসসহ ০২ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এরই সূত্র ধরে পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকজনকে আইসসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। আইস সিন্ডিকেটের তৎপরতারোধে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে তীক্ষè গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আইস কারবারের অন্যতম হোতা (১) মোঃ জসিম উদ্দিন@জসিম (৩২), পিতাঃ মোঃ হোসেন (২) মকসুদ মিয়া (২৯), পিতাঃ মৃত একলাছ মিয়া, (৩) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন (২৩), পিতাঃ মৃত একলাছ মিয়া, এবং (৪) শাহিন আলম (২৮), পিতাঃ মৃত একলাছ মিয়া, (৫) মোঃ সামছুল আলম (৩৫) পিতাঃ এ কে ফজলুল হক, মহেশখালী, কক্সবাজার’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১২ কেজি আইস/ক্রিস্টাল মেথ (যার আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা), ০১ লাখ পিস ইয়াবা, ৪,৬০০ পিস চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন, ২টি বিদেশী পিস্তল, ০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২টি টর্চলাইট, বার্মিজ সিমকার্ড, ১ লক্ষ ৬৪ হাজার বাংলাদেশী টাকা ও ১ লক্ষ বার্মিজ মুদ্রা ও ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা মায়ানমারের মাদক চক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ আইস কারবারের সাথে জড়িত। বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত জসিম এর নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশে উক্ত চক্রের সদস্য সংখ্যা ১২/১৫ জন। এই চক্রটি মূলত সোনাদিয়া কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র। ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশাল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অবৈধ মাদক ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা পৌছাত। তারা মূলত নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসত।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে তারা নৌপথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করত। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মিয়ানমারের এই চক্রের সদস্যরা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা সাগর পথে পাচার করে আসছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে।
সাগর পথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থলে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ (২০/২৫ দিন) জেলেদের ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে থাকে। মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে। অতঃপর বহনকৃত ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া হতে দুইটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়াতে ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবার চালান নিয়ে আসত। এভাবে বহনকৃত মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছালে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মাদকের চালান সংরক্ষণ করা হয়।
অতঃপর পুনরায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া/ঢাকার আশেপাশে অথবা সুবধিাজনক স্থানে পৌঁছাত। ঢাকা ছাড়াও এরা বরিশাল, পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করতো। মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র আইস ও ইয়াবার চালান গ্রহণ করে এবং সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। উল্লেখ্য, নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য চক্রটি ২টি বোট ব্যবহার করে থাকে। সামনের বোটটিকে নজরদারী করতে ব্যবহার করত এবং পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হতো। মোবাইল অথবা টর্চ লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত। পথিমধ্যে নজরদারীতে নিয়োজিত স্কর্ট বোট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মুখীন/সন্দেহজনক কিছু আঁচ করতে পারলে পিছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত প্রদান করত।