ছেলেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার
ফরিদপুরে বোয়ালমারীতে ছেলেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে নবজাতকে কিনে নেওয়া এক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মামলা হলে শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন শিশুর বাবা বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের ইদ্রিস শেখের ছেলে রবিউল শেখ এবং নবজাতককে কিনে নেওয়া বাবুল মিয়া। নবজাতক কেনাবেচায় জড়িত জেসমিন ও বাবলি নামে দুই নারীকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় শিশু চুরির অভিযোগ দেন নবজাতকের মামা দাউদ খালাসি। পরে তার অভিযোগটি মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হিসেবে রুজু করা হয়।
নবজাতকের মা শারমিন আক্তার (২৩) বলেন, আমার স্বামী রবিউল ভ্যান চালায়। মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজ করে যা ইনকাম করে আনে তাতেই আমি খুশি। ছয় মাস আগে আমার অজ্ঞাতসারে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। আমি তা সহ্য করে একই বাড়িতে সংসার করে আসছি।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ৮ জুন আমি তখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমাকে আমার শ্বশুর, স্বামী ও সতিন মিলে জোর করে অটোরিকশায় তোলার চেষ্টা করে। আমি বাধা দিলে তারা আমাকে মারধর করতে থাকে। আমি মার খেয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লে শ্বশুর আর স্বামী মিলে অটোতে তুলে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে জোর করে সিজার করায়। সিজার করার আগে আমাকে ইনজেকশন দিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয়।
শারমিন আরও বলেন, অপারেশনের আগে এক নার্স আমাকে বলে যে, আপনি বাচ্চা বিক্রি করবেন কেন? কিন্তু তখন আমি আর নড়াচড়া করতে পারি না। সিজার হওয়ার পর নার্সরা সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসে কপালে চুমু খাওয়ায়। এরপর আর আমি আমার সন্তানকে চোখে দেখিনি। আমার স্বামী আগে থেকেই বাচ্চা বিক্রির করা জন্য ক্রেতা খুঁজে রেখেছিল। এজন্য তারা আমাকে জোর করে সিজার করাইছে। আমি সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামীর বিচার চাই।
মামলার বাদী সালথা উপজেলার নটাখোলা গ্রামের দাউদ খালাসী বলেন, আমার বোনের সঙ্গে রবিউলের সংসারে তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রবিউল ছয় মাস আগে আরেকটি বিয়ে করে। আমার বোন তা মেনে নিয়ে সতিনকে নিয়ে একই বাড়িতে সংসার করে আসছে। তারপরও আমার বোনের ওপর রবিউল ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী, রবিউলের বাবা ইদ্রিস শেখ নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে।
ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, শিশুটির মামা দাউদ আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে শিশুটির বাবা রবিউল ও শিশুটিকে কিনে নেওয়া বাবুল মিয়াকে আটক করি। এর সঙ্গে জেসমিন ও বাবলি নামে দুই নারী জড়িত, তাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ওসি বলেন, পরে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আসামিদের শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর ওই নবজাতক এখন ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। শিশুটিকে উদ্ধারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ৮ জুন মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারে মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর শিশুটির অবস্থা একটু আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ফরিদপুর জায়েদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে আনা হয়। পরে শিশুটির বাবা রবিউল নিঃসন্তান বাবুল মিয়ার কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই রাতেই শিশুটিকে বিক্রি করে দেন।