বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে স্বামীকে ফেলে নারীকে গণধর্ষণ
গাজীপুরে স্বামীকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে ৪-৫ জন মিলে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী থানায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার ও বাস জব্দ করেছে পুলিশ।
শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মো. রাকিব মোল্লা (২৩), নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ারের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিলের ছেলে মো. সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট থানার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে মো. শাহিন মিয়া (১৯) ও খুলনা জেলার রূপসা থানার খান মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত নুর আলমের ছেলে মো. সুমন হাসান (২২)।
পুলিশ, থানায় দায়ের করা অভিযোগ, ভিকটিমের স্ব জনদের বরাত দিয়ে জানা যায়, নওগাঁ থেকে শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাসে স্বামীর সঙ্গে নামেন এক নারী। ময়মনসিংহের স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে যেতে অপর একটি গাড়ির জন্য অপক্ষোর করছিলেন। রাত ৩টা ১০ মিনিটে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে তাকওয়া পরিবহনে ওঠে ওই বাসে ৬/৭ জন যাত্রী দেখতে পান তারা। রওনা দেওয়ার কিছু সময় পর বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোতাপাড়ায় পৌঁছলে ২ জন যাত্রী নেমে যান। রাত ৩টা ৪০ মিনিটে বাসটি মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভার পাড় হয়ে কিছুদুর সামনে গেলে চলন্ত বাসে থাকা অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন লোক হঠাৎ ওই নারীর স্বামীকে মারধর শুরু করলে তাদের হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করে নারী। এসময় অজ্ঞাত লোক জন ওই নারীর মুখ চেপে ধরে রাখে এবং স্বামীকে মারপিট করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকায় চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে বাসে নারীকে নিয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়। স্বামী বাস থেকে পড়ে আঘাত পেয়ে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার বোনের বাসায় চলে যায়। শনিবার সকাল অপরিচিত একটি মোবাইল থেকে ফোন করে ওই নারী বিস্তারিত ঘটনা এবং জয়দেবপুর থানায় আছেন বলে স্বামীকে জানান। পরে স্বামী ওই নারীর কাছে যান এবং বিস্তারিত ঘটনা শুনেন।
এসময় ভিকটিম নারী তার স্বামীকে জানান, তাকে (স্বামী) গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার পর অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি ভিকটিম নারীর চোখ বেঁধে, মুখ চেপে ধরে জোর করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় নারীর কাছে থাকা একটি বাটন মোবাইল ফোন, নগদ ১০ হাজার ৫শ টাকাসহ সঙ্গে থাকা অন্যান্য মালামাল নিয়ে চলে যায়।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, ভিকটিম নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিত্রে শ্রীপুর থানায় মামলা রুজুর পর অভিযানে নামে শ্রীপুর থানা ও গাজীপুর জেলা পুলিশের একাধিক দল। জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার ও বাসটি জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, এঘটনায় অভিযুক্ত ৫ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং লুষ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীকে গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীকাল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ ঘটনাটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামে। ঘটনার ৮ ঘণ্টার মধ্যে সম্পৃক্ত ৫ জন আসামিকে গ্রেফতারপূর্বক ভিকটিমের ছিনতাইকৃত মোবাইল, ব্যাগ, নগদ ৪ হাজার টাকাসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি উদ্ধার করা হয়। তদন্তের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্ল্যাহ্।
এ বিভাগের আরও খবর...