আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বিদেশ সফরের সময় কিলার ভাড়া করে তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এখনো বারবার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। শুধু দেশে না, বিদেশেও প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলব না। এটুকু জানিয়ে রাখলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমি বিদেশে যাই সেখানেও কিলার হায়ার (ভাড়া) করে আমাকে মারার প্রচেষ্টা। সেই চেষ্টা করেছে ওই খালেদা জিয়ার ছেলে, যে লন্ডনে বসে আছে, সেসহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই। তবে আমি কখনো এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই।
তিনি বলেন, জন্মালে তো মরতেই হবে। যতক্ষণ আমার জীবন আছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। শুধু আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।
জনগণই তার শক্তির উৎস মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ হলো শক্তির উৎস। আমার দেশে ফেরা, কাজ করা, আমার একটাই শক্তি ছিল, সেটা হলো এদেশের জনগণ। এই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলছি।
তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার পরিবার বলতে আমি বুঝি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ। সেই মানসিকতা নিয়ে সেই আন্তরিকতা নিয়েই আমি দেশের জন্য কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, কে কোন দল করে, সেটা তিনি দেখেননি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দর জীবন, উন্নত জীবন পাক, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ, সেই উন্নত বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম, জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি। তাহলে এগুলো গেল কোথায়?
তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্যগুণ বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এটা করতে পারব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, অধিকার সুরক্ষিত থাকুক, সেটা আমরা চাই।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে কমে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় খুব সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র এক হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি।
নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ছিল বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আর সেটাকেই ধ্বংস করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। তারা কোন বাংলাদেশ চায়? এই ধ্বংসস্তূপ, নাকি উন্নত বাংলাদেশ?
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন মান যে উন্নতি হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চান? একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারবে। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।
তিনি বলেন, কোন বাংলাদেশ আমরা চাই? দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি। বলেছিলাম দিন বদলের সনদ। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ! আমার আজ বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতা নেই।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষ হত্যা, মামলা নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নতি করি, অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র।
তিনি বলেন, ২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, কোন মানুষ এরকম করতে পারে? ২০১৩, ১৪ ও ২০১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল। তারপর আবার ভয়ংকর রূপ জাতি দেখছে।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত ছোট একটি পুস্তক সংসদ সদস্যদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাত, বাজেট বৃদ্ধি, জিডিপির আকার বৃদ্ধি, শিক্ষা খাত, এডিপি, দারিদ্র্য বিমোচন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি, সরকারি সেবা সহজীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।