বঙ্গবাজারের আগুনের প্রভাব পড়েছে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসাখাতে
ঢাকার বঙ্গবাজারের আগুনের প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাখাতে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী অনেকটা নীরবেই যেন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেক মালিকের কাজ কমে গেছে। কর্মচারী-কারিগররা বসে অলস সময় পার করছেন। অথচ এই সময়ে তাদের দিনরাত এক করে কাজ করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আর তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরাও নিঃস্ব হয়ে গেছেন। যাদের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই।
বাণিজ্যিক শহর নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত পাইকারি পোশাকের বিক্রয়কেন্দ্র নয়ামাটি, দেওভোগ মার্কেট, হাবিব কমপ্লেক্স ও রিভারভিউ শপিং কমপ্লেক্সের কয়েকশ ব্যবসায়ী আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। তাদের বকেয়া পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিভাউভিউ মার্কেটের প্রায় ১৮০ জন, নয়ামাটি এলাকার মার্কেটের প্রায় ১০০ জন, দেওভোগ মার্কেটের ১০০ জন, থানকাপড় মার্কেটের ৫০ জন ও অন্য মার্কেটের প্রায় ২০০ জন ব্যবসায়ী আছেন যারা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রত্যেকের কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ কিংবা তারও বেশি বকেয়া ছিল বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে।
সে হিসাবে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাবছরই নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের পোশাক কিনতেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কিছু টাকা পরিশোধ করতেন আর কিছু টাকা বকেয়া রাখতেন। আর ঈদ উপলক্ষে লেনদেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঈদের বেচাকেনা শেষে সব টাকা পরিশোধ করে দিতেন ব্যবসায়ীরা। আর এভাবেই তাদের নিয়মিত লেনদেন চলতো। কিন্তু এবছর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে পোশাক কিনলেও সেই টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। কারণ তাদের সহায়-সম্বল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ইমরান নামে এক হোসিয়ারী শ্রমিক বলেন, কাজের চাপ থাকার কারণে অন্য জায়গা থেকে আমাকে বেশি বেতন দেবে বলে এখানে নিয়ে এসেছিল। কয়েকদিন কাজও করেছিলাম দিন-রাত। কিন্তু বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর থেকেই আমাদের কাজ কমে গেছে। এখন অলস সময় পার করছি। হাতে কোনো কাজ নেই। বেতনও পাবো কী না সন্দেহ রয়েছে।
নয়ামাটির পলাশ টেক্সটাইলের প্রোপাইটার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও আমি লাখ লাখ টাকার পোশাক বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বাকিতে বিক্রি করেছি। ২৮ অথবা ২৯ রোজায় পাওনা টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। তাদের কাছে পাওনা টাকা চাইবো কীভাবে? সত্যি কথা বলতে গেলে তাদের চেয়ে আমরা বেশি পুড়েছি। হাবিব কমপ্লেক্স মার্কেটের মিনহাজুল হোসিয়ারীর পরিচালক মনির হোসেন বলেন, আমি বঙ্গবাজারে ১০ জন ব্যবসায়ীর কাছে ৪০ লাখ টাকার বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করেছি। আর এই পুরো টাকাটাই বকেয়া রয়েছে। কথা ছিল ঈদের আগে সেই টাকা পরিশোধ করে দেবে। আর সেই টাকায় কর্মচারীদের বেতন দিতাম, থানের ঘরের টাকা দিতাম, ব্যাংকের কিছু টাকা পরিশোধ করতাম। কিন্তু এখন আর কিছুই হবে না।
দেওভোগ মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবাজারের আগুনে আমাদের এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের কাছে আমাদের ৪০ কোটি টাকারও বেশি পাওনা আছে। এখন তাদের সবকিছু আগুনে পুড়ে যাওয়াতে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। কীভাবে শ্রমিকদের বেতন দেবো, কীভাবে ব্যাংকের টাকা দেবো বুঝতে পারছি না। হাবিব কমপ্লেক্স হোসিয়ারী মালিক সমিতির অর্থ-সম্পাদক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন বলেন, সারাবছর নিজের টাকায় থান কাপড় কিনে, নিজের টাকায় শ্রমিকদের বেতন দিয়ে, নিজের টাকায় দোকান ভাড়া দিয়ে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া রেখে পোশাক বিক্রি করেছি। প্রতি বছরই ঈদের পরে সব টাকা পরিশোধ করে দিতো। কিন্তু এবছর ঈদের আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা পাওনা আছে। এই টাকা কীভাবে কবে পাবো তা জানা নেই। শুধু আমিই না আমার মতো নারায়ণগঞ্জের প্রায় ৫০০ পোশাক বিক্রেতার ১০০ কোটি টাকারও বেশি পাওনা আছে সেখানে