বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা কালশী মাঠে গণসমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজারবাগ সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে সেটা আমরা মনে করি না। পরিস্থিতি সব সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের (বিএনপি) শুভবুদ্ধির উদয় হোক। একঘেয়েমি ছেড়ে হয় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসুক। নয়তো কালশী মাঠে যাক। এরপরও আলোচনা হতে পারে। তারা আসুক, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসুক। তারা বিরাট সমাবেশ করুক, আমরাও দেখি, দেশবাসীও দেখবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কাজ করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি ভাঙচুর করেন, জানমালের ক্ষতি করেন, আহত করেন, তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের কাজই তো প্রটেকশন দেওয়া।
কিন্তু যারা বসবেন তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা রাজনৈতিক সমাধানে ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মীর্জা ফখরুল তো আছেন। আপনার কী তাই মনে হয়? এছাড়া কোনো উপায় কী ছিল নাকি? পুলিশ যেভাবে মার খাচ্ছিল, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করেছে- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ছবি আমরাও দেখেছি। পুলিশ হামলা করেনি, সার্চ করেছে। ভাঙচুর হতে পারে, সমর্থকরা নিশ্চয় ধাক্কা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়তো সে রকম হতে পারে।
পুলিশ ব্যাগে করে বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল নিয়ে গেছে- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার যেসব পুলিশ আহত হয়েছেন তাদের দেখে আসুন, তারা কী নিজেরা নিজেদের ককটেলে আহত হয়েছেন নাকি? তারা মার খেয়েছেন, ককটেল হামলার শিকার হয়েছেন।
ককটেলে এত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে, পুলিশের সক্ষমতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশ সব সময় মনে করে আসছে, এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে ককটেল মারতে হবে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি হামলা করতে হবে পুলিশের ওপর। পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে থাকে, জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করে আসছে। পুলিশ এক্সপেক্টই করেনি হামলা হতে পারে।
তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করেছে, নানা কথা বলেছে, সমালোচনা করেছে, আমরা কিছুই বলিনি। কোথাও আমরা বাধা দিইনি। বড় বড় সমাবেশ করেই তারা মন খুলে কথা বলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় এসেই বলছেন, তারা বিশাল সমাবেশ করবেন। নানাভাবে খবর আসছিল ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ করবেন। তারা প্রথম চেয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অফিসের সামনে ও সংসদ ভবনের সামনে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখন অনুমতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না ছাত্রলীগের সম্মেলনের কারণে। সংসদ ভবনের সামনে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর আনা হলো। ডিএমপি কমিশনার তাদের অনুমতি দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু এরপর তারা বললেন, পল্টনেই সমাবেশ করবেন। আমরা বিকল্প স্থানের কথা বললাম। কালশী, পূর্বাচলে। কিন্তু তারা পল্টনেই করবেন।
তিনি বলেন, এরপর হঠাৎ গতকাল শুনলাম পুলিশের ওপরে ঢিল, ইটপাটকেল, ককটেল বিস্ফোরণ ও আক্রমণ করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪৯ আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সিরিয়াস কয়েকজন ঢামেক হাসপাতালে আছেন। রাজারবাগ হাসপাতালে একজনের ৪২টা সেলাই দিতে হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, অনেকের শরীরে মারধর, আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, বেশির ভাগই হাতবোমার স্প্রিন্টারে আহত হয়েছেন। এভাবেই তারা পুলিশ বাহিনীকে আহত করেছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী নিবৃত হয়নি। টিয়ারসেল, রাবার বুলেট মেরেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুদ, পানির মজুদ ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা ছিল। ছুরি-কাচি ছিল। ডেগে ডেগে খিচুরি ছিল। এগুলো আনার পেছনে কারণ কী? তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এ সমস্ত রসদ এনেছিলেন।