নগর সংবাদ।। মরু শহর রাজশাহীতে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মিলেছে। এতে হাফ ছেড়ে বাঁচল মানুষ ও নিদারুণ কষ্টে থাকা পশু-পাখিরা।
টানা তাপপ্রবাহের পর বুধবার (২০ এপ্রিল) ভোররাতে এক পশলা বৃষ্টিতে মরা গাছগুলোও যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। বৈশাখী খরতাপে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত; তখন বৃষ্টি যেন অন্যরকম প্রাণশক্তি হয়ে ধরা দিলো।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে- এর মধ্যে দিয়ে টানা ১৬ দিনের তাপপ্রবাহ কাটল। রাজশাহীর রুক্ষ প্রকৃতিতে তাপমাত্রার পারদ আবার নামলো ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছিল। তবে তার পরিমাণ ছিল মাত্র ০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আর বুধবার রাজশাহীতে ১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মূলত ৪ এপ্রিলের পর থেকে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। বৃষ্টি না হওয়ায় সেই তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হয়। এর মধ্যে আট বছর পর গত ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ সকল রেকর্ড ভাঙে। ওই দিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই দেশের সর্বোচ্চ এ তাপমাত্রায় পদ্মাপাড়ের রাজশাহীর জনজীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে।
রাজশাহীর গত কয়েক দিনের আবহাওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে আবহাওয়া কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু করে। এর মধ্যে ১৬ এপ্রিল রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ এপ্রিলও ছিল একই তাপমাত্রা। এরপর ১৯ এপ্রিল রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর বুধবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বৃষ্টি হওয়ায় টানা ১৬ দিন পর রাজশাহীতে চলমান তাপপ্রবাহ কাটল।
সাধারণত ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। এছাড়া দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয় বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে, অব্যাহত তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন যেন এতদিন যায় যায় করছিল। অগ্নিদহনে বিবর্ণ হয়ে উঠেছিল সবুজ রাজশাহী। আগ্রাসী তাপ আর গরম বাতাসে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল। পদ্মাপাড়ের বাতাস যেন অনুভূত হচ্ছিল আগুনের হলকার মত। এরপর টানা তাপদাহে বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছিল। এ সময় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হয় ক্ষেতের বোরো ধান। তীব্র গরমে ঝরে পড়ছিল আম ও লিচুর গুটি।