মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলায় নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। তার ছেলেদের দাবি, মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ডাকাতির হামলায় নিহত হয়েছে তিনি। তবে স্থানীয় ও স্বজনদের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যার পর ডাকাতের হামলায় খুন হওয়ার নাটক সাজিয়েছেন ছেলেরা। সোমবার (১০ এপ্রিল) ভোরে উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাসানচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর নুরুল ইসলামের দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নুরুল ইসলাম পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। আটকরা হলেন- নুরুল ইসলামের বড় ছেলে মো. সুমন হাওলাদার, তার স্ত্রী ও আরেক ছেলে মোহাম্মাদ আলী হাওলাদার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী সন্তানদের পারিবারিক কলহ ছিল। প্রায় সময় তাদের বাড়িতে ছোট-খাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। রোববারও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগমর সঙ্গে নুর ইসলামের ঝগড়া হয়। তাছলিমাকে নুর মারধর করেছিলেন। এরপর তাদের ছেলেরা বাবাকে মারধরের জন্য খোঁজাখুঁজি করছিল। সোমবার ভোরে শোনা যায় নুরুল ইসলামকে কারা যেন হত্যা করেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের আগে নুর ইসলামের ছেলে সুমন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, তার বাবা রোববার গভীর রাতে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। ভোরে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় সংঘবদ্ধ ডাকাতরা নৌকায় হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, মাছ ও জাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে জলদস্যুরা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তার বাবা নুরুল ইসলাম হাওলাদার মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে নুরুল ইসলামের ছোট বোন হামিদা বেগমের দাবি, ‘কিছু থেকে কিছু হলে ভাবি ও ভাতিজারা আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। আমার ভাই তার জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। তার ছেলেরা কেউ কোনো কাজ করতো না। কয়েকদিন ধরে তিনি একা একা জমির ধান কাটছিলেন।
এ নিয়ে ভাই ভাতিজাদের গালিগালাজ করেন। ভাবিও ভাতিজাদের পক্ষ নিয়ে ভাইকে গালিগালাজ করেন। পরে ভাই-ভাবির মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন ভাই-ভাবিকে মারধর করেন। এ ঘটনা শুনে তার ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ভাইকে মারধরের প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি আমার ভাই আমাকে জানিয়েছিল। শুনেছিলাম এ নিয়ে ভাই থানায়ও গিয়েছিল।’ হামিদা বেগম আরও বলেন, ‘আমার ভাই রাতে আমাকে মোবাইল ফোনে বলেছিল, বাড়ি গেলে তার ছেলেরা তাকে মেরে ফেলবেন। স্থানীয় মাতব্বরদের ভরসায় তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। ভোরে ছোট ভাতিজা সুজন ফোন করে জানালো তার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার ভাই একজন কাঠমিস্ত্রি। সে কখনো মাছ ধরতেন না। তাকে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মাছ ধরার কথা বলা হচ্ছে। আমার ভাইকে আমার ভাতিজারা তাদের মামাদের সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম এ কালাম প্রধান বলেন, ভোর সোয়া ৪টার দিকে নুরুল ইসলামকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খাইরুল হাসান বলেন, নিহতের পরিবার প্রথম বলে ডাকাতের হামলায় নিহত হয়েছে। তবে পরে সংবাদ পাই ছেলেরা হত্যা করেছে। সবগুলো তথ্যের তদন্ত চলছে। মাঠে আমাদের টিম কাজ করছে। প্রকৃত ঘটনা কী তা খুঁজে বের করা হবে। নিহতের মাথায় ও শরীরে ধরালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। নিহতের দুই ছেলেসহ পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।