নগর সংবাদ।।আরিফুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয় সোহাগী আক্তারের (২০)। এরপর দুজনের মধ্যে প্রায় কথা হতো। চার-পাঁচ মাস কথা বলার পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভবিষ্যত নিয়ে নানা স্বপ্ন বুনে দুজনে। কিন্তু সামনা-সামনি দুজনের দেখার হওয়ার পর ভেস্তে যায় সাজানো স্বপ্ন। বন্ধ হয়ে যায় তাদের মধ্যে কথা বলা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সোহাগী। ক্ষ্ব্ধু হয় আরিফুল। প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে সে। ফলশ্রæতিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পূর্ব শেয়ারচর লালখাঁ এলাকার আলী হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম শ্রীঘরে আর সোহাগী কবরে। নিহত সোহাগী শেরপুর জেলার নতলা উপজেলার কায়দা গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে এবং নকলা সরকারি হাজী জাল মাহমুদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার (৪ জুলাই) ভোররাতে রাতে আরিফুল সোহাগীকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে নৃসংশভাবে হত্যা করে। তার বক্তব্য ‘আমার লগে সম্পর্ক রাখে নাই, তাই ওরে দুনিয়া থেইকা সরায়া দিলাম।’ পরে পুলিশ আরিফুলকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত তাকে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।।
জানা যায়, সোহাগী আক্তার শেরপুর জেলার নকলা এলাকার বাসিন্দা। রং নাম্বারের সূত্র ধরে মোবাইলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ৪-৫ মাস কথা বলার পর দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় একে অপরের সঙ্গে সামনা সামনি দেখা করার। গত রমজান মাসে প্রথম দেখার পরই সোহাগী বুঝতে পারেন- আরিফুলের মানসিক সমস্যা রয়েছে। এরপরই তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে অনেক চেষ্টা করেও আরিফুল সোহাগীর সঙ্গে কথা বলা কিংবা যোগাযোগ করতে না পেরে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে সোহাগীকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নেন।
পরিকল্পনামতে, রোববার (৩ জুলাই) শেরপুরের নকলা থানার কায়দা গ্রামে সোহাগী আক্তারের বাড়িতে যান আরিফুল। এবং রাতের কোনো এক সময় আরিফুল ইসলাম সোহাগীদের বাড়ির বাইরে রান্নাঘরে অবস্থান নেয়। সোমবার ভোররাতে সোহাগীর বাবা ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আরিফুল তাকে ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। চিৎকার শুনে সোহাগী ও বাড়ির লোকজন বের হয়ে আসলে বাবাকে ছেড়ে সোহাগীকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন আরিফুল। এসময় বাবা-মেয়ে দু’জনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসক সোহাগীকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মুমূর্ষু শহিদুল ইসলামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুসফিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আরিফুলকে আটক করি। সে হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে- ‘আমার লগে সম্পর্ক রাখে নাই, তাই ওরে দুনিয়া থেইকা সরায়া দিলাম।’
ওসি জানান, আটক আরিফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আর নিহতের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিকেলে আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।