চন্দ্র মাসের শাবান মাস বান্দাদের জন্য মহিমান্বিত মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসকে তাঁর নিজের মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আর এ মাসেই শবে বরাতের মতো বরকতময় রাত রয়েছে। তাই শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ও নামাজ আদায় করে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম)।
এ ব্যাপারে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, ‘নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোজা উত্তম।’ (তিরমিজি)।
তাই পবিত্র রমজানের ৩০টি রোজা পালনের কঠিন কাজটি সহজ করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শাবান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় মাসের একটি হলো শাবান। এ মাসে নফল রোজা আদায় করেই তিনি মাহে রমজানের রোজা পালন করতেন।’ (আবু দাউদ)
তাই পবিত্র রমজানের রোজা শুরু করার আগে শাবান মাসে কিছু নফল রোজা রাখা প্রয়োজন। এতে রমজানের রোজা পালন সহজ হয়। যারা শাবান মাসে নফল রোজা রাখতে চান, তাদের শবে বরাতের সাথে সাথেই শেষ করে ফেলা উচিত। শাবানের অর্ধেকের পর বেশি রোজা না রাখাই ভালো।
হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে শাবান মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতে দেখি।’ শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এ মাস অনেকেই খেয়াল করে না। এটি এমন একটি মাস, যে মাসে মানুষের সব কর্মকাণ্ড আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়। তাই আমি চাই, এ সময়ে আমার কর্মকাণ্ডের খতিয়ান আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হোক, যখন আমি রোজা অবস্থায় আছি।’ (নাসাঈ ও আবু দাউদ)
এ ছাড়া শাবান মাসের শবে বরাতের রাতে বান্দার সারাবছরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য বান্দার জীবন, মৃত্যু, খাবার, ধন-সম্পত্তি ইত্যাদির নতুন বন্দোবস্ত করা হয়। যে কারণে শাবান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ মাসে মুসলমানদের আমল-আখলাক যেন সুন্দর হয়, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শাবান মাসের মর্যাদা এতই বেশি, যখন তিনি এ মাসে উপনীত হতেন; তখন পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
তাই পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক শাবান মাসের শবে বরাতকে কেন্দ্র করেই। অন্য মাসের চেয়ে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও শবে বরাতে তওবা-ইস্তিগফার করে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার শপথ নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।