বাবা, এক ভরসার জায়গা। অনেকাংশে বাবারা খুবই সাধারণ হন। কোমল মনের অধিকারী। বাবারা কঠোর পরিশ্রম করতে রাজি, তবুও সন্তানদের সুখ-শান্তিতে রাখতে চেষ্টায় অবিরত। নিজের শক্তি-সামর্থ থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। বাবা হন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো, নিরাপত্তার চাদর, অদৃশ্য ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত, নির্ভরতার আশ্রয়স্থল, হাজারো আবদারের জায়গা। বাবার উদাহরণ তিনি নিজেই। কারো সঙ্গে হয় না তার তুলনা।
বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা কোনো দিন বা মাসে আটকে থাকে না। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস বছরের ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস হচ্ছে জুন মাসের তৃতীয় রোববার। দক্ষিণ আমেরিকায় এটি পালিত হয় ১৯ মার্চ। অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রোববার।
মা দিবস প্রথম পালিত হয়েছিল ১৮৬০ সালে। সেই তুলনায় বাবা দিবসের বয়স কমই বলা যায়। আমেরিকায় মা দিবসকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করা শুরু হয় ১৯১৪ সাল থেকে। মা দিবস যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে, বাবা দিবসের ক্ষেত্রে একটু সময়ই লেগেছে। ১৯০৮ সাল। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক গির্জায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এর আগের বছরই একটি কয়লা খনিতে বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ৩৬২ জন কয়লা শ্রমিক। তাদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এ প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন। ইতিহাস এমনটাই বলছে।
যদিও বাবা দিবসের সঙ্গে এর তেমন কোনো সম্পর্কে নেই। তবে ঠিক এর পরের বছর ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তাদের। তাদের সাত ভাই-বোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এ ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটি দিন থাকা দরকার।
অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোয় বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও ধীরে ধীরে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। দীর্ঘ ছয় দশক পর মেলে বাবা দিবসের স্বীকৃতি। ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন। এর মাঝে বেশ কিছু আন্দোলনও হয়ে গেছে মা দিবস এবং বাবা দিবস একসঙ্গে করে প্যারেন্ট ডে পালনের জন্য। তবে বেশিরভাগ মানুষ আলাদা আলাদা দিন পালনেই রত থাকে। অবশ্য কেউ কেউ এটিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ধান্ধা বলতেও কার্পণ্য করেননি।
আমার বাবা মো. হারুন অর রশিদ পটুয়াখালীর গলাচিপা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ও সাংবাদিক। আমার জীবনের জন্য সে একজন আদর্শ। আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা শিক্ষক। লেখালেখির জগতে আমার হাতেখড়ি তার কাছে। তাই তো আজ বিশ্ব বাবা দিবসে অপ্রস্তুতভাবেই বাবার অজান্তেই বাবাকে নিয়ে লিখতে বসলাম। বাবার জন্য এ পৃথিবীতে আসা। জীবনে পথচলার হাজারো যুদ্ধের পাশাপাশি বা পেছন থেকে সাহস জোগানো ব্যক্তি হলেন বাবা।
বাবা, তোমার ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়। হয়তো মুখ ফুটে বলা হয়নি, বাবা তোমায় কতটা ভালোবাসি।