সোমবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্ত্রী ও শাশুড়ির কাছে জল্লাদ শাহজাহানের প্রতারণার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টাইমস পিআর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান বলেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আমি ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের প্রায় দু-মাসের মাথায় আমার স্ত্রী ও শাশুড়ি আমার জমানো প্রায় ১৭ লাখ টাকা ও গহনা নিয়ে পালিয়ে যান। পাশাপাশি আমার নামে যৌতুকের মামলা দেন।
নিজের বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমি কেরানীগঞ্জের বাবুবাজারে বসবাস শুরু করি। সেখানে একটি চায়ের দোকান দেই। একদিন অটোরিকশায় করে যাওয়ার সময় গাড়ির ভেতর একটি ভেনেটি ব্যাগ পাই। পরে সেই ভেনেটি ব্যাগের মালিক ২৩ বছর বয়সী সাথী আক্তার ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি ফেরত দেই। পরে তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়। এরপর আমাকে বিয়ে করেন তিনি। তারা যে এত বড় প্রতারক সেটি আমি জানতাম না।
তিনি জানান, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। আর কারাগার থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আমি টাকা পাই। সব মিলিয়ে আমার কাছে ১৮ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে বিয়ে করেই এখন আমি সর্বস্বান্ত হয়েছি। এখন আমার জীবন কীভাবে চলবে, কোথায় থাকবো কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছি। অনাহারে জীবন চলছে। কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে খাই না।
স্ত্রীর কাছে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে শাহজাহান বলেন, গত বছর ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করেছি। বিয়ের কাবিন পাঁচ লাখ টাকা হলেও আমার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা স্টাম্পে লিখে নিয়ে আমার স্ত্রী সাথী আক্তারবিয়ের ৫৩ দিনের মাথায় পালিয়ে গেছেন। সে সময় ঘরে থাকা আরও সাত লাখ টাকা ও গহনা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিয়েছে। আমি থানায় মামলা দিতে গেলে সেই মামলা নেয়নি। বললো বউয়ের নামে মামলা হয় না। পরে আইনজীবীর সহযোগিতায় গত রোববার (৩১ মার্চ) আদালতে স্ত্রী-শাশুড়িসহ ছয়জনের নামে প্রতারণার মামলা করেছি। আদালত মামলাটি তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমার মা-বাবা নেই। দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভাই-বোন নেই। আমার থাকার জায়গা নেই। কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয় রোজগার নেই, অর্থের জোগান নেই। ৪৪ বছর কারাভোগ শেষে বাইরে এসে আমি বার বার প্রতারণার শিকার হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কারাগারের বাইরের জীবন এত কঠিন হবে জানলে, আমি কারাগারেই থেকে যেতাম। আমি কারাগার থেকে বের হলে আমার ভাগিনা নজরুল আমাকে অটোরিকশা কিনে দিবে বলে আমার টাকা মেরে দেন। পরে আমি একটি চায়ের দোকান দিলে, আমার সঙ্গে দোকানে যে ছেলেটি সময় দিতো, সে চার মাস আমার সঙ্গে থাকার পর দোকানে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়।
শাহজাহান বলেন, আমি এখন উভয় সংকটে জীবন-যাপন করছি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা। অন্যদিকে এক নারী আমার জীবনের শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমাকে থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। আমাকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য সহজ কর্মের ব্যবস্থা করে দিন। পাশাপাশি তিনি তার প্রতারক স্ত্রী ও শাশুড়িসহ এ চক্রের শাস্তির দাবিও জানান।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে টাইমস পিআর এর প্রধান নির্বাহী মিজান সোহেল ও শাহজাহানের আইনজীবী ওসমান গণি উপস্থিত ছিলেন।